Difference between revisions of "Health-and-Nutrition/C2/Cradle-Hold-for-Breastfeeding/Bengali"

“ক্র্যাডেল” বা “দোলনারমতো” ধরেবুকেরদুধখাওয়ানোর “মৌখিকপ্রশিক্ষণে” আপনাকেস্বাগতজানাই।

এইপ্রশিক্ষণেআমরাশিখব -

একজন মা তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ঠিক কিভাবে ধরবেন

বুকেরদুধখাওয়ানোরআগেমাকে কিভাবে তৈরি হতে হবে,আর

কিভাবে “ক্র্যাডেল হোল্ড” বা “দোলনার মতো” ধরতে হবে।

আসুন, শুরু করি। সারা বিশ্বে, নানারকমভাবে ধরে মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান। আগের একটি প্রশিক্ষণে যেরকম বলা হয়েছে- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে একজন মায়েরসবচেয়ে ভালো ধরার উপায় হল সেটি, যাতে-

বুকের দুধ খাওয়ানোর পুরো সময় জুড়ে মা ও বাচ্চা দুজনেই আরামে ও ভালোভাবে থাকেন

বাচ্চা তার মায়ের স্তনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে

আর, অনেক বেশি দুধ খেতে পারে।

আসুন, আমরা “ক্র্যাডেল হোল্ড” বা “দোলনার মতো” ধরে থাকা সম্বন্ধে জেনে নিই।

বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে, মা অবশ্যই সাবান আর জল দিয়ে নিজের হাত ধুয়ে নেবেন।

আর, ঠিক করে হাত শুকিয়ে নেবেন।

তারপর, তিনি এক গ্লাস ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা জল খাবেন।

দুধ উৎপাদনকারী মায়েরা প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ থেকে ৮৫০ মিলিলিটার দুধ উৎপাদন করেন।

সেজন্য, তাদের প্রতিদিনের জল খাওয়া আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

আসুন,এরপর মা কিভাবে থাকবেন সেটা নিয়ে কথা বলি।

মাকে জমিতে বা বিছানায় এক পায়ের ওপর আড়াআড়িভাবে অন্য পা রেখে বসতে হবে।

বা, একটি চেয়ারের ওপর জমিতে পা রেখে বসতে হবে।

চেয়ারটা খুব উঁচু হওয়ার কারণে পা যদি মাটিতে না পৌঁছয়, তাহলে-

তিনি একটা ছোট টুল বা মেঝেতে বালিশ রেখে তার ওপর পা সোজা করে রাখতে পারেন।

বসার সময়ে দেখতে হবে যে-

পিঠ যেন সোজা থাকে যাতে পিঠে ব্যথা না হয়

তার কাঁধ ঢিলেভাবে রাখতে হবে,উঁচু করে বা বেঁকিয়ে রাখা যাবে না

আর,বুকের দুধ খাওয়ানোর পুরো সময় জুড়ে এরকম আরামেই থাকতে হবে।

এখন, যে স্তনটি মা বাচ্চাকে খাওয়াবেন সেটিরকাপড় সরাবেন।

দেখতে হবে যাতে স্তনের ওপর ব্রা বা ব্লাউজের চাপ না লাগে।

আরাম করে বসার পর বাচ্চাকে মায়ের কাছে আনতে হবে।

মা যে স্তনটি থেকে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন, সেইদিকের হাত দিয়ে বাচ্চাকে ধরবেন।

বাচ্চার মাথা ওই হাতের কনুইয়ের ভেতর দিকের ভাঁজে আরামেশোয়ানো থাকবে।

একই হাত দিয়ে মাকে তার বাচ্চার মাথা, ঘাড়ও কাঁধ ধরে রাখতে হবে।

এই ছবিতে মা তার বাচ্চাকে ডানদিকের স্তন থেকেখাওয়াবেন।

তাই, তিনি তার ডানহাত দিয়ে বাচ্চার মাথা, ঘাড় ও কাঁধ ধরেছেন,আর

বাচ্চার মাথাটা তার ডান কনুইয়ের ভেতরদিকের ভাঁজে আরামদায়ক অবস্থায় আছে।

যদি বাচ্চাকে তোলার জন্য মায়ের বাড়তি সাহায্য লাগে, তাহলে তিনি কোলের ওপর একটি বালিশ নিয়ে বাচ্চার নিচে রাখতে পারেন।

মনে রাখবেন, মা কখনই নিজের পিঠ বেঁকিয়ে বাচ্চার কাছে স্তন আনবেন না।

এতে সমস্যা হবে আর পিঠে ব্যথালাগবে।

তিনি সবসময়ে পিঠ সোজা রাখবেন আর বাচ্চাকে স্তনে পৌঁছনোর জন্য তুলে ধরবেন।

আসুন, এরপরে বাচ্চার শরীরকে কিভাবে আমরা ঠিকভাবে রাখব সেটি শিখে নিই।

বাচ্চার পেট মায়ের শরীরের সঙ্গে ছুঁয়ে আলতোভাবেচেপে থাকবে।

দুজনের শরীরের মধ্যে দূরত্ব যত কম হয়, স্তনে পৌঁছনোর জন্য বাচ্চাকে তত কম খাটতেহয়।

আর, এতে বাচ্চা গভীরভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে।

তারপর, দ্বিতীয় জরুরি কথা হল বাচ্চার পুরো শরীরটা কোন দিকে ধরে রাখা হয়েছে।

আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে - আমরা যখন খাই, আমাদের মাথা, ঘাড় আর শরীর সবসময়ে একই দিকে থাকে।

কিন্তু, অনেকসময়ে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে বাচ্চার মাথাটা প্রায়ই পাশের দিকে ঘুরিয়ে দেন।

এতে বাচ্চারখেতে অসুবিধা হতে পারে।

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে বাচ্চার মাথা, ঘাড় এবং শরীর সবসময় একইদিকে থাকবে।

এতে দুধ গিলতে বাচ্চার সুবিধা হবে।

এখন আমরা তৃতীয় বিষয়, মানে,বাচ্চারশরীরের অবস্থান নিয়ে কথা বলব।

মাকে বাচ্চার মাথা, ঘাড় ও কাঁধে অবলম্বন দিতে হবে।

না হলে, স্তনের সঙ্গে লেপটে থাকার জন্য বাচ্চাকে অনেক খাটতে হবে।

এরপর, আসুন, দেখে নিই বাচ্চার নাক আর চিবুক কোথায় থাকবে।

বাচ্চার নাক বোঁটার সঙ্গে একই লাইনে থাকবে।

আর, তার চিবুক সামনের দিকে স্তনের খুব কাছে থাকবে।

এতে ঠোঁট লাগানোর সময়ে বাচ্চা “এরিওলা”-র নীচের দিকের বেশিরভাগটাই মুখের ভেতরে নিতে পারবে।

আর তার ফলে, সে ভালোভাবে বেশি দুধ খাওয়ার জন্য চোয়ালের নীচের দিকটা কাজে লাগাবে।

খেয়াল রাখবেন – “এরিওলা” হল স্তনের বোঁটার চারপাশের কালো অংশ।

এখন, বাচ্চাকে যখন ঠিক অবস্থায় রাখা হয়েছে তাহলে,

আসুন, শিখে নিই কিভাবে স্তন ধরতে হবে।

মায়ের যে হাতটা খালি আছে সেটার আঙুলগুলো দিয়েস্তনটির ওপর থেকে ইংরেজি “U”–এর মতো করে ধরতে হবে।

এই ছবিতে মা তার বাঁহাত দিয়ে ডান স্তন ধরবেন। বুড়ো আঙুল এবং অন্য আঙুলগুলো ঠিক কোথায় থাকবে, সেটা বোঝার জন্য ভাবুনবোঁটাটি একটা ঘড়ির মাঝখানের মতো মায়ের ডানদিকের স্তনের ওপররয়েছে।

মাকে তার বাঁহাতের বুড়ো আঙুল এই ঘড়িতে ৩টে বাজার মতো করে রাখতে হবে।

বাঁহাতের তর্জনী এবং মধ্যমা ঘড়িতে ৯টা বাজার মতো করে রাখতে হবে।

স্তন ধরার সময়ে, মায়ের আঙুলগুলো সবসময় বাচ্চার ঠোঁটের দিকে থাকবে।

কেন? আসুন, একটা খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে এটা বুঝে নিই।

যখন আমরা চপ বা পাউরুটি খাই, আমাদের ঠোঁট আড়াআড়ি খোলে।

আমরা বড় করে কামড় দেওয়ার জন্য চপ বা পাউরুটি আড়াআড়ি ভাবে ধরি।

এখানে বুড়ো আঙুল এবং অন্য আঙুলগুলো ঠোঁটের দিকে ধরা হয়েছে।

যদি আমরা চপ বা পাউরুটি লম্বাভাবে ধরি, তাহলে আমরা বড় করে কামড় দিতে পারব না।

একইভাবে, বাচ্চার ঠোঁট কোনদিকে সেটি খেয়াল করুন। এখানে ঠোঁটগুলি লম্বালম্বি রয়েছে।

তাই, আঙুলগুলো এবং বুড়ো আঙুলও স্তনের ওপর লম্বালম্বি রাখতে হবে।

এতে বাচ্চা “এরিওলা”-র নীচের দিকের বেশিরভাগটাই মুখের ভেতরে নিতে পারবে।

বাচ্চার ঠোঁটের দিকে হওয়া ছাড়া, মায়ের বুড়ো আঙুল আর আঙুল বোঁটা থেকে সবসময়ে ৩ আঙুল দূরে থাকবে।

চপ বা পাউরুটি খাওয়ার সময়ে, যদি সেটা মুখের খুব কাছে ধরি, তাহলে কামড় বসানোর সময়ে আমাদের আঙুলগুলো মুখে আটকে যাবে।

যদি আমরা সেটা খুব দূরে ধরি, তাহলে সেটা ঠিক করে আমাদের মুখে আঁটবে না।

তাই, বড় করে কামড়ানোর জন্য আমরা এটাকে সঠিক দূরত্বে ধরে থাকি।

এই ছবিতে যেমন দেখানো হয়েছে, বোঁটা থেকে ৩ আঙুল হল বাচ্চার জন্য ঠিকঠাক দূরত্ব।

এই দূরত্বের ফলে -

“এরিওলা”র নীচের দিক মুখের ভেতরে নেওয়ার সময় মায়ের আঙুলগুলো বাচ্চার মুখে আটকাবে না।

মা শুধুমাত্র বোঁটায় চাপ দেবেন না, যেখান থেকে খুব কম দুধ বেরোয়।

মা “এরিওলা”র নীচের দিকে বড় দুধের নালিগুলিতে চাপ দেবেন যাতে বেশি করে দুধ বেরোয়।

আর, স্তনটিকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বাচ্চা গভীরভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে।

মনে রাখবেন- মায়ের বুড়ো আঙুল স্তনের সেইদিকে থাকবে যেদিকে বাচ্চার চিবুক রয়েছে।

আর তার ২টো আঙুল স্তনের সেইদিকে থাকবে যেদিকে বাচ্চার নাক রয়েছে।

আমরা আবার চপ আর পাউরুটির উদাহরণে ফিরে যাব।

চপ বা পাউরুটি ঠিকভাবে ধরার পর, আমরা বড় করে কামড় দেওয়ার জন্য সবসময় এটাতে চাপ দিই।

একইভাবে, মা তার স্তনের ওপরদিক থেকে ইংরেজি “U”-এর মতো ধরে আলতো চাপ দেবেন ।

এতে বাচ্চা “এরিওলা”-র নীচের দিকের বেশিরভাগটাই মুখের ভেতরে নিতে পারবে।

কিন্তু মনে রাখবেন, মা কখনও স্তনে ইংরেজি “V”-এর মতো ভেতর দিকে ধরে চাপ দেবেন না।

এইভাবে চাপ দিলে স্তনে মোচড় লাগবে আর ফলে বোঁটা থেকে খাওয়ানো বা নিপল ফিডিং হবে।

এটাও খেয়াল রাখুন, স্তনে বুড়ো আঙুল ও অন্য আঙুলগুলোর চাপ যেন সমান হয়। না হলে, বোঁটা ডানদিকে বা বাঁ দিকে সরে যাবে।

আর, বাচ্চা তার মায়ের স্তনের সঙ্গে ভালোভাবে লেপটে থাকতে পারবে না।

মনে রাখবেন, কখনওপাশের দিক থেকে ঠেলে স্তন বাচ্চার কাছে আনবেন না।

বাচ্চাকে সবসময় স্তনের দিকে আনবেন।

এখন, বাচ্চাকে “দোলনার মতো” বা “ক্র্যাডেল হোল্ড”-এর মতো ধরা হয়েছে আর সে বুকের দুধ খাওয়ার জন্য স্তনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকতে প্রস্তুত হয়েছে।

একই সিরিজের আরেকটা প্রশিক্ষণে বাচ্চাকে স্তনের সঙ্গে সঠিকভাবে সংযুক্ত রাখার বিষয়ে বলা হয়েছে।

বাচ্চা যেইমাত্র স্তনের সঙ্গে ভালভাবে লেপটে যাবে আর স্তন যদি বেশি ভারি না হয়, তাহলে-

মা তার হাত থেকে স্তন ছেড়ে দেবেন

আর ধরার জন্য বাচ্চার শরীরের নিচে ওই হাতটা নিয়ে আসবেন।

এই অবস্থায় মা দুহাত বাচ্চার শরীরের খুব কাছে আনবেন।

এতেবুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তিনি আরামেথাকবেন।

আমাদের এই প্রশিক্ষণ এখানেই শেষ হল।

এখানে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।